শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬

Rajrajeshwar Temple, Dwarhatta, Hooghly

শ্রীশ্রী রাজরাজেশ্বর  মন্দির,  দ্বারহাট্টা,  হরিপাল,  হুগলি

                                                            শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            হাওড়া-তারকেশ্বর  রেলপথে  হরিপাল  ১৬ তম   রেলস্টেশন।  রেলপথে  হাওড়া  থেকে  দূরত্ব  ৪৫  কিমি।  হরিপাল  স্টেশন  থেকে  নয়/ দশ  কিমি  দূরের  একটি  গ্রাম  দ্বারহাট্টা। প্রাচীন  গ্রাম্য  দেবী  দ্বারিকা  চণ্ডীর  নামানুসারে  গ্রামের  নাম  হয় দ্বারহাট্টা।  আগে  দ্রারহাট্টা  মহকুমা  ছিল।  দিনেমার  শাসিত  শ্রীরামপুর  ইস্ট  ইণ্ডিয়া  কোম্পানী  ক্রয়  করলে  উহা  হুগলি  জেলার  অন্তভুক্ত  হয়  এবং  দ্বারহাট্টা  মহকুমার বদলে  শ্রীরামপুর  মহকুমা  হয়। 

            দ্বারহাট্টা  গ্রামে  প্রথম  দ্রষ্টব্য  দ্বারিকা  চণ্ডীর  মন্দির।  এই  মন্দিরের  বিবরণ  আগেই  দিয়েছি।  এই  গ্রামের  দ্বিতীয়  দ্রষ্টব্য  বাবু  পাড়ার  রাজরাজেশ্বর  মন্দির।  অপূর্বমোহন  সিংহরায়  এই  মন্দিরের  প্রতিষ্ঠাতা।  মন্দিরের  গায়ে  যে  প্রতিষ্ঠা-ফলক  আছে  তাতে  মন্দিরটি  ১১৩৬  সালে  নির্মিত  বলে  লেখা  আছে।  ব্যবসা  করে  সিংহরায়  বংশ  প্রচুর  অর্থের  অধিকারী  হন  এবং  এই  অঞ্চলের  বহু  জমিদারি  কেনেন।  দান,  পূজাপার্বণ,  পুষ্করিণী  খনন,  মন্দির  প্রতিষ্ঠা  ইত্যাদি  করে  তিনি  সমাজে  প্রতিষ্ঠা  লাভ  করেন।  ষোড়শ  শতাব্দীর  মধ্যভাগে  সম্রাট  আকবরের  রাজত্বকালে  যোধপুর  থেকে  এঁদের  পূর্বপুরুষ  এখানে  এসে  বাস  করেন।  মানসিংহের  বোনের  সঙ্গে  আকবরের  বিবাহের  পর  মুসলমানদের  সঙ্গে  সম্বন্ধ  করবার  ভয়ে  বহু  ছত্রী  সেই  সময়  জয়পুর,  যোধপুর  প্রভৃতি  স্থান  থেকে  বাংলাদেশে  চলে  আসেন।  

            উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  প্রতিষ্ঠিত, পূর্বমুখী,  ত্রিখিলান  প্রবেশদ্বারযুক্ত  মন্দিরটি  আটচালা  শৈলীর।  গর্ভগৃহের  সামনে  ঢাকা  বারান্দা।  গর্ভগৃহে  ঢোকার  একটাই  প্রবেশদ্বার। মন্দিরের  সামনের  দেওয়ালে,  খিলানের  উপর,  স্তম্ভের  গায়ে,  ঢাকা  বারান্দায়,  প্রচুর  টেরাকোটার  অলংকরণ  আছে।  এই  'টেরাকোটা'র  অনেকটাই  নষ্ট  হয়ে  গেছে।  যা  অবশিষ্ট  আছে  তা  দেখে  বোঝা  যায়  এই  টেরাকোটা  উচ্চ  শ্রেণীর।  টেরাকোটাগুলির  মধ্যে  রামরাবনের  যুদ্ধ,  দুর্গা,  কালী  ইত্যাদি  পৌরাণিক  চিত্র,  গড়গড়ায়  ধুমপান,  ফিরিঙ্গি  সৈন্য  ইত্যাদি  সামাজিক  চিত্র,  হংসসারি,  নকশা  ইত্যাদি  উল্লেখযোগ্য।  গর্ভগৃহে  সিংহরায়  বংশের  কুলদেবতা  শ্রীশ্রী রাজরাজেশ্বর  ( শালগ্রাম  শিলা )  প্রতিষ্ঠিত  ও  নিত্যপূজিত। 

শ্রীশ্রী রাজরাজেশ্বর  মন্দির,  দ্বারহাট্টা

বাঁ  দিকের  খিলানের  উপরের  কাজ

ডান   দিকের  খিলানের  উপরের  কাজ
মাঝের  খিলানের  উপরের  কাজ

রাম-রাবণের  যুদ্ধ

মন্দিরের  প্রতিষ্ঠাফলক

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ১

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ২

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ৩

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ৪

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ৫

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ৬

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ৭

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ৮

ভিত্তিবেদি  সংলগ্ন  টেরাকোটার  কাজ - ৯

স্তম্ভের  গায়ের  কাজ - ১

স্তম্ভের  গায়ের  কাজ - ২

স্তম্ভের  গায়ের  কাজ - ৩

কুলঙ্গির  মধ্যে  নিবদ্ধ  কাজ - ১

কুলঙ্গির  মধ্যে  নিবদ্ধ  কাজ - ২

কালী  মূর্তি 

টেরাকোটার  নকশা

অলিন্দের  দেওয়ালে  টেরাকোটার  ঘোড়া 

শ্রীশ্রী  রাজরাজেশ্বর ( শালগ্রাম  শিলা )

            দ্বারহাট্টার  মন্দিরে  যেতে  হলে  হাওড়া  থেকে  তারকেশ্বর  লোকালে  উঠুন।  নামুন  হরিপাল  স্টেশনে।  স্টেশনের  পাশ  থেকে  বড়গাছিয়া  গামী  বাসে  উঠুন।  নামুন  রামহাটিতলা।  সেখান  থেকে  রিকশায়  বা  হেঁটে  মন্দির। রিকশায়  গেলে  রিকশা  ছাড়বেন  না। কারণ  ফিরতি  পথে  রিকশা  পাবেন  না। 
             

   সহায়ক  গ্রন্থ :
                 ১)  হুগলি  জেলার  ইতিহাস  ও  বঙ্গসমাজ ( ৩ য়  খণ্ড ) :  সুধীর  কুমার  মিত্র                    



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন