বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

Shri Adwaita Pat, Babla, Santipur, Nadia, West Bengal


শ্রী অদ্বৈত  পাট,  বাবলা,  শান্তিপুর,  নদিয়া


                     শ্যামল  কুমার  ঘোষ 


             ১৪৩৪  খ্রীষ্টাব্দে  শ্রী অদ্বৈতাচার্য  শ্রীহট্টের  অন্তর্গত  লাউড়  পরগণার  নবগ্রাম  নামক  পল্লীতে  জন্মগ্রহণ  করেন।  তাঁর  পিতার  নাম  কুবের  মিশ্র,  মাতা  লাভা  দেবী।  কুবের  আচার্য  লাউড়ের  রাজা  দিব্যসুন্দরের  সভাপণ্ডিত  ছিলেন।  অদ্বৈতাচার্য়ের  বাল্যকালের  নাম  কমলাক্ষ।  বার  বছর  বয়সে  তিনি  শান্তিপুরে  আসেন  স্মৃতি  শাস্ত্র  ও  ন্যায়  শাস্ত্র  পড়ার  জন্য।  শান্তিপুরের  অন্তর্গত  পূর্ণবাটী  নিবাসী  শান্ত  বেদান্তবাগীশ  নামক  জনৈক  অধ্যাপকের  কাছে  বেদচতুষ্টয়  অধ্যয়ন  করে  তিনি  'বেদ  পঞ্চানন'  ও  'অদ্বৈতাচার্য'  উপাধি  লাভ  করেন।  বিদ্যাশিক্ষা  শেষ  করে  তিনি  স্থায়ীভাবে  শান্তিপুরে  বসবাস  করতে  মনস্ত  করেন।  বৈষ্ণবদের  কাছে  তিনি  মহাবিষ্ণু  বা  শিবের  অবতার  রূপে  পূজিত  হন।

            শান্তিপুরের  কাছে  বাবলা  নামক  স্থানে  আম  বাগানের  মধ্যে  শ্রীঅদ্বৈত  পাট  অবস্থিত।  যদিও  এই  স্থান  নিয়ে  মতভেদ  আছে।  এই  অদ্বৈত  পাট  সমগ্র  বৈষ্ণবমণ্ডলীর  পরম  তীর্থক্ষেত্র।  এই  পবিত্র  ক্ষেত্রে  শ্রীঅদ্বৈতাচার্য  জীবের  দুঃখ-কষ্ট   মোচনের  জন্য  কঠোর  তপস্যায়  ভগবানের  আরাধনা  করেছিলেন।  জনশ্রুতি,  এই  আরাধনা  ক্ষেত্রেই  শচীমাতা  তাঁদের  পরম  পূজ্যপাদ  গুরুদেব  শ্রীঅদ্বৈত  প্রভুর  আশীর্বাদপূত  তুলসীমঞ্জরী  সেবনেই  শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গসুন্দরকে  গর্ভে  ধারণ  করেছিলেন।  চৈতন্যদেব  যখন  জন্মগ্রহণ  করেন  তখন  অদ্বৈতাচার্য়ের  বয়স  ৫২  বৎসর।  তিনি  ১২৫  বছর  বেঁচেছিলেন।

            বাবলা  শ্রীপাট  সেই  পবিত্র  স্থান  যেখানে  ঘটেছিল  গৌরাঙ্গ,  নিত্যানন্দ  ও  অদ্বৈতের  মহামিলন।  সন্ন্যাস  গ্রহণের  পর  এই  অদ্বৈত  ভবনে  মহাপ্রভু  দশ  দিন  অবস্থান  করেন।  এখানেই  শচীমাতা  প্রাণের  দুলাল  সন্ন্যাসীবেশী  গৌরসুন্দরকে   নিজের  হাতে  রান্না  করে  আহার  করান।  এখানেই  গৌরাঙ্গ  অদ্বৈতাচার্য়ের  কাছে  শ্রীমদ্ভাগবত  ও  বেদশাস্ত্র  অধ্যয়ন করে  'বিদ্যাসাগর'  উপাধি  লাভ  করেন।  এই  পবিত্র  ক্ষেত্রেই  ব্রজকল্পতরু  মাধবেন্দ্র  পুরী  অদ্বৈতাচার্যকে  দীক্ষা  দান  করেন।  শ্রীহরিদাসের  অদ্বৈতপ্রভুর  কাছে  দীক্ষালাভ  এই  আশ্রম  ভূমিতেই।  এই  স্থানেই  লাউড়ের  রাজা  দিব্যসিংহ  শাক্ত  ধর্ম  ত্যাগ  করে   অদ্বৈতাচার্য়ের  শিষ্য  হন  এবং  'লাউড়িয়া  কৃষ্ণদাস'  নামে  পরিচিত  হন। 

            শ্রীঅদ্বৈতপ্রভুর  প্রকটাবস্তায়  গঙ্গা  বাবলা  শ্রীপাটের  পাশ  দিয়ে  বইত।  কালক্রমে  গঙ্গা  দূরে  সরে  যাওয়ায়  শান্তিপুর  গ্রামও  এই  স্থান  থেকে  দূরে  স্থাপিত  হয়  এবং  অদ্বৈতের  বংশধরেরা  বহু  পরিবারে  বিভক্ত  হয়ে  শহরের  বিভিন্ন  স্থানে  নিজের  নিজের  সুবিধামত  বাসস্থান  নির্মাণ  করে,  বিগ্রহ  স্থাপন  করে  বসবাস  করতে  থাকে।  এই  শ্রীপাট  ক্রমে  জঙ্গলাকীর্ণ  হয়ে  পড়ে  এবং  সংস্কারাভাবে  আশ্রমটি  ধ্বংস  হয়ে  যায়।
      
            সাধু  সীতানাথ  দাস  নামক  শ্রীসম্প্রদায়ী  এক  বৈষ্ণব  স্বপ্নাদেশে  এই  বৈষ্ণব  তীর্থকে  পুনরুদ্ধার  করেন  এবং  ভিক্ষালব্ধ  অর্থ  দ্বারা  মন্দির  নির্মাণ  করে  শ্রীঅদ্বৈত  প্রভুর  দারুময়  মূর্তি,  শ্রীশ্রী  রাধাকৃষ্ণ  মূর্তি,  শ্রী  গোপাল  জিউ  মূর্তি,  শ্রীবিষ্ণুনারায়ণ  শিলা  প্রভৃতি  প্রতিষ্ঠা  করে  নিত্য  সেবা  করতে  থাকেন।  কথিত  আছে  যে  অদ্বৈতাচার্যের  বংশধর  প্রভুপাদ  বিজয়কৃষ্ণ  গোস্বামী  একদা  হরিসংকীর্তনের  দল  নিয়ে  সংকীর্তন  করতে  করতে  বাবলার  শ্রীপাটে  এলে  একটি  কুকুরের  ( ভক্তরাজ  কেলে )  ইঙ্গিতে  একটি  নির্দিষ্ট  স্থান  খনন  করলে  শ্রীঅদ্বৈত  প্রভুর  কমলাক্ষ  নামাঙ্কিত  কাষ্ঠ  পাদুকা  ও  কমণ্ডলু  উদ্ধার  করেন।  সীতানাথ  দাস  বাবাজির  মৃত্যুর  পর  নারায়ণ  দাস  বাবাজি,  রাজকুমার  রায়  ও  সীতানাথ  গোস্বামী  সেবার  ভারপ্রাপ্ত  হন।  সীতানাথ  সেবাসমিতির  হাতে  সেবার  ভার  দেন।  তিনি  সম্পাদক  এবং  রায়  নগেন্দ্রনাথ  মুখোপাধ্যায়  বাহাদুর  সভাপতি  থাকেন।  এরমধ্যে  শান্তিপুরের  কতিপয়  প্রসিদ্ধ  ব্যক্তির  স্বাক্ষর  সম্বলিত  পত্রের  দ্বারা  ক্ষমতাপ্রাপ্ত  হয়ে  শ্রীনিকুঞ্জমোহন  গোস্বামী  মন্দিরের  পুনঃসংস্কার  কার্যে  নিযুক্ত  হন  এবং  সেবাদিও  চালাতে  থাকেন।  এমন  সময়  বিরোধের  সৃষ্টি  হয়  এবং  মামলা  হয়।  একটি  সভায়  কয়েকটি  কারণে  তাঁকে  বর্জনের  প্রস্তাব  করে  শ্রী  রামচন্দ্র  গোস্বামী,  শ্রী  মানগোবিন্দ  গোস্বামী  ও  সীতানাথ  গোস্বামীর  মধ্যম  পুত্র  শান্তিসুধাকে  সভ্য  করে  শেষোক্ত কে  সেবায়েত  নিযুক্ত  করা  হয়।  বর্তমানে  শ্রীঅদ্বৈত  পাটের  সেবায়েত  শ্রী  প্রশান্ত  গোস্বামী।     

            সাধু  সীতানাথ  দাস  শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের  যে  মন্দির  নির্মাণ  করেন  সে  মন্দির  ভেঙে  পড়ায়  শ্রীবিজয়কৃষ্ণ  গোস্বামীর  শিষ্যরা  বর্তমান  দালান  মন্দিরটি  ১৩৪৯  সনের  ১৬ ই  বৈশাখ  পুননির্মাণ  করে  দেন।  মন্দিরের  ভিতর   শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের  সুন্দর  দারুমূর্তি,  রাধাকৃষ্ণ  ও  নারায়ণ  শিলা  প্রতিষ্ঠিত।  মন্দিরের  সামনে  নাটমন্দির।  মন্দিরের  প্রবেশদ্বার  দিয়ে  ঢুকলে  ডান  দিকে  পাশাপাশি  শ্রীবিজয়কৃষ্ণ  গোস্বামী  ও  হরিদাস  ঠাকুরের  মন্দির।     মন্দিরের  পিছনে  বাঁ  দিকে  তিন  প্রভু  গৌর,  নিতাই  ও  সীতানাথের  বিশ্রামস্থল।  পাশেই  শ্রীপাদ  মাধবেন্দ্রপুরির  মন্দির।  শ্রীঅদ্বৈতপাটে   প্রতি  বছর  মাঘ  মাসের  শুক্লপক্ষের  সপ্তমী  তিথিতে  শ্রীঅদ্বৈত  প্রভুর  আবির্ভাব  দিবস  ও  দোলপূর্ণিমার  পর  সপ্তমী  তিথিতে  দোল  উৎসব  পালন  করা  হয়। 

            বাবলার  শ্রীঅদ্বৈত  পাটে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  শান্তিপুর  লোকাল  ধরুন ।  রেলপথে  শান্তিপুরের  দূরত্ব  ৯৩  কিমি।  ট্রেনে  সময়  লাগে  ঘন্টা  আড়াই ।  স্টেশন  থেকে  রিকশায়  বা  টোটোতে  পৌঁছে  যান  বাবলার  শ্রীপাটে।  শহরের  কোলাহল   থেকে  দূরে  আমবাগানের  মধ্যে  অবস্থিত,  শান্ত  পরিবেশের  এই   শ্রীপাট  একদিনের  জন্য  ভালই  লাগবে।

            মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ০৩.০১.২০১৬

পাঁচিল  দিয়ে  ঘেরা  শ্রীঅদ্বৈত  পাট

নাটমন্দির,  শ্রীঅদ্বৈত  পাট

নাটমন্দিরের  ভিতরের  চিত্র,  সামনে  মন্দিরের   দরজা 

নাটমন্দির  ও  মূল  মন্দির

শ্রীঅদ্বৈত  প্রভুর  বিগ্রহ

শ্রীবিজয়কৃষ্ণ  গোস্বামী  ও  হরিদাস  ঠাকুরের  মন্দির

শ্রীবিজয়কৃষ্ণ  গোস্বামীর  বিগ্রহ

শ্রীহরিদাস  ঠাকুরের  চিত্র

শ্রীপাদ  মাধবেন্দ্রপুরির  মন্দির  ও  তিন  প্রভুর  বিশ্রামস্থল

শ্রীচৈতন্য  বিগ্রহ
        
     সহায়ক  গ্রন্থাবলি  :
                         ১)  শ্রীশ্রীঅদ্বৈত  পাট  :  শ্রী  সীতানাথ  গোস্বামী 
                         ২)  শান্তিপুর  পরিচয়  :  শ্রী  কালীকৃষ্ণ  ভট্টাচার্য 
                         ৩)  বাংলায়  ভ্রমণ ( ১ম  খণ্ড ) :  পূর্ববঙ্গ  রেলপথের  প্রচার  হইতে  প্রকাশিত 

           -------------------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------


সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

108 Shiv Temple,Ambika Kalna,Purba Bardhaman, West Bengal

নবকৈলাস  মন্দির  ( ১০৮ শিব  মন্দির ), অম্বিকা  কালনা, পূর্ব  বর্ধমান 

                                                 শ্যামল  কুমার  ঘোষ 

            অম্বিকা  কালনার  রাজবাড়ি  মন্দির  চত্বরের  দক্ষিণ  দিকের  প্রবেশ-দ্বারের  রাস্তার  বিপরীত  দিকে  ১০৮  শিব  মন্দিরের  প্রবেশ-দ্বার।  যদিও  মন্দিরগুলি  ১০৮  শিবমন্দির  নামেই  পরিচিত  তবে  প্রতিষ্ঠা  লিপি  অনুযায়ী  এটি  ১০৯  টি  শিব  মন্দির  এবং  এর  নাম   'নবকৈলাস  মন্দির'।  উত্তর  দিকের  মূল  প্রবেশদ্বারের ( সম্ভবত  এই  প্রবেশদ্বারের  বিপরীতে  দক্ষিণ  দিকে  আর  একটি  প্রবেশদ্বার  ছিল।  পরে  বন্ধ  করা  হয়েছে।  কারণ  ওখানেও  একটি  প্রতিষ্ঠালিপি  আছে। )  উপরের  পাথরের  প্রতিষ্ঠালিপিতে  বলা  হয়েছে : 

   শাকে  চন্দ্রশিবাক্ষিসপ্তি   কুমিতে  শ্রী 
   তেজচন্দ্রাভিধো   রাজা  সূর্য্য  ইবাস্থি
   রার্পিতচলচ্চণ্ডপ্রতাপানলঃ
   শম্ভো  র্ধাম  পরং  নবাধিকশতশ্রী 
   মন্দিরৈ  র্মণ্ডলং  প্রাকার্ষীম্মহদা 
   ম্বিকাখ্যনগরে  কৈলাশমেতং  নবং 

            এর  অর্থ  হল,  চন্দ্র = ১,  শিবাক্ষি = ৩,  সপ্ত =৭,  কু =১। 
অঙ্কের  বামাগতি  নিয়মানুসারে,  ১৭৩১  শকাব্দে  ( ১৮০৯  খ্রীষ্টাব্দে )  অম্বিকা  নামক  নগরে  শ্রীতেজশ্চন্দ্র  নামে  রাজা  একশ  নয়টি  শ্রীমন্দিরমণ্ডল  শিবালয়  নবকৈলাস  রূপে  তৈরি  করলেন।  রাজা  তেজশ্চন্দ্র  যেন  স্বয়ং  সূর্য।  সূর্যের  মধ্যে  স্থির  আছে  ভয়ঙ্কর  বহ্নি।  রাজা  তেজশ্চন্দ্রের  মধ্যেও  প্রতাপানাল  প্রচণ্ড,  কিন্তু  সচল। 

            কালনার  ১০৯ টি  শিব  মন্দিরের  মধ্যে  ১০৮  টি  শিব  মন্দির,  দুটি  এককেন্দ্রিক  বৃত্তে  অবস্থিত।  বাইরের  বৃত্তে  ৭৪  টি  এবং  ভিতরের  বৃত্তে  ৩৪  টি।  আর  বৃত্তের  বহির্দেশে  একটি।  এককেন্দ্রিক  বৃত্তদ্বয়ের  কেন্দ্রে  রয়েছে  একটি  বড়  ইঁদারা।  এটিকে  শূন্য  অর্থাৎ  নিরাকার  ব্রহ্মস্বরূপ  পরম  শিবের  প্রতীক  বলে  অনেকে  মনে  করেন।  আসলে  হয়তো  এই  ইঁদারাটি  তৈরি  করা  হয়েছিল  মন্দিরের  পূজার  কাজে  ব্যবহৃত  জলের  চাহিদা  মেটাতে।

            ভিতরের  বৃত্তের  পূর্ব  ও  পশ্চিমের  দুটি  প্রবেশদ্বার  আটচালা  মন্দিরাকৃতি।  বাইরের  বৃত্তের  দক্ষিণ  ও  উত্তরের  দুটি  প্রবেশদ্বারও  আটচালা  মান্দিরাকৃতি।  আগেই  উল্লেখ  করেছি  যে  দক্ষিণদিকের  প্রবেশদ্বারটি  বর্তমানে  বন্ধ  আছে।    

            এখানে  বাইরের  বৃত্তের  শিবলিঙ্গগুলি  একটি  কৃষ্ণবর্ণের, পরেরটি  শুভ্রবর্ণের,  পর্যায়ক্রমে। আর  ভিতরের  বৃত্তের  শিবলিঙ্গগুলি  সবই   শুভ্রবর্ণের।  বৃত্তের  বহির্দেশে,  পশ্চিমদিকে  যে  ১০৯  সংখ্যক  শিবমন্দিরটি  রয়েছে  তার  শিবলিঙ্গটি  কৃষ্ণবর্ণের।  মন্দিরের  শুভ্রবর্ণের  শিবলিঙ্গগুলি  ভগবান  সদাশিবের  প্রতীক  এবং  কৃষ্ণবর্ণের  শিবলিঙ্গগুলি  রুদ্রের  প্রতীক। প্রথম  বৃত্তে  ভক্ত  পর্যায়ক্রমে  দেখেন  ভগবান  রুদ্র  ও  সদাশিব  মূর্তি।  শেষে   ভক্ত  বৈকুন্ঠের  অন্তর্গত  তমোগুণ  সম্বন্ধরোহিত  শিবলোকে  পৌঁছে  যান  এবং  সর্বত্রই  সদাশিবের  মূর্তি  প্রত্যক্ষ  করেন। 

            বৃত্তের  মধ্যের  মন্দিরগুলি  আটচালা।  চারচালের  উপরে  ক্ষুদ্রাকৃতি  আরেকটি  চারচালা।  মন্দিরগুলি  অল্প  উঁচু  ভিত্তি  বেদির  উপর  স্থাপিত  এবং  পরস্পর  সংলগ্ন।  মন্দির গুলিতে  টেরাকোটার  কোন  কাজ  নেই।  ১০৯   সংখ্যক  মন্দিরটি  উঁচু  ভিত্তিবেদির  উপর  প্রতিষ্ঠিত  পঞ্চরত্ন  মন্দির। এর  ছাদের  চারকোণে  চারটি  চূড়া  এবং  মাঝখানে  অপেক্ষাকৃত  বড়  একটি  চূড়া।  বারান্দায়  ওঠার  জন্য  আছে  আটটি  সিঁড়ি।  বর্তমানে  এর  নাম  জলেশ্বর  মন্দির।  শ্রী  যজ্ঞেশ্বর  চৌধুরী  বলেছেন  যে  জপমালায়  যেরূপ  ১০৮  টি  বীজ  গাঁথা  থাকে  এবং  মধ্যস্থলে  ঈষৎ  বড়  আকারের  একটি  বীজ  মেরুস্বরূপ  থাকে  সেই  রকম  এই  শিবক্ষেত্র  নির্মাণের  সময়  উক্ত  বিধান  মানা  হয়েছিল।

            জলেশ্বর  শিবমন্দিরের  মত  আরেকটি  'পঞ্চরত্ন'   মন্দির  রয়েছে  মূল  মন্দির  বৃত্তের  বাইরে  পূর্ব  দিকে।  এর  নাম  রত্নেশ্বর  মন্দির।  অনেকে  মনে  করেন  যে  দেবী  ভাগবতের  ১১০  টির  অনুসরণে  এখানে  ১০৮ + ২ = ১১০ টি  শিবলিঙ্গের  প্রতিষ্ঠা।  তাঁরা  মনে  করেন  যে  প্রতিষ্ঠালিপিতে  'নবাধিক  শত'  বলতে  ১০৯-এর  অধিক  বলা  হয়েছে।   

            নবকৈলাস  মন্দিরের  প্রবেশদ্বার  দিয়ে  ঢুকলে  বাঁ  দিকে  যে  মন্দিরটি  আছে  তার  শিবলিঙ্গ  শুভ্র  এবং  শিবের  সঙ্গে  আছে  শ্বেতপাথরের  নন্দী।  সমস্ত  মন্দিরের   শিবলিঙ্গগুলি  নিত্য  পূজিত।  দর্শনার্থীদের  মধ্যে  অনেকেই  প্রতিটি  শিবলিঙ্গের মাথ্যায় জল  ঢালেন  এবং  এটাই  রীতি।   
                   
নবকৈলাস  ( ১০৮ শিবমন্দির ) - ১

নবকৈলাস  ( ১০৮ শিবমন্দির ) - ২

নবকৈলাস  ( ১০৮ শিবমন্দির ) - ৩

দক্ষিণ  দিকের  বন্ধ  প্রবেশদ্বার

ভিতরের  বৃত্তের  প্রবেশদ্বার 

বৃত্তদ্বয়ের  কেদ্রের  ইঁদারা

মন্দিরে  রাতের  আলোকসজ্জা 

উত্তর  দিকের  প্রতিষ্ঠালিপি

দক্ষিণ  দিকের  প্রতিষ্ঠালিপি

শুভ্রবর্ণের  শিবলিঙ্গের  একটি

কৃষ্ণবর্ণের  শিবলিঙ্গের  একটি

প্রবেশদ্বারের  বাঁ  দিকের  মন্দিরের   শিবলিঙ্গ

জলেশ্বর  শিবমন্দির

জলেশ্বর  শিবমন্দিরের  সামনের  বিন্যাস

রত্নেশ্বর  শিবমন্দির

রত্নেশ্বর  শিবমন্দিরের  সামনের  বিন্যাস


             অম্বিকা  কালনার  এই  মন্দিরে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  সকাল  ৮ টা  ৬ মিনিটের  কাটোয়া  লোকাল  বা  হাওড়া  থেকে  কাটোয়া  লোকাল  ধরুন।  ব্যাণ্ডেল  থেকেও  অম্বিকা  কালনা  যাওয়ার  গাড়ি  পাবেন।  স্টেশন  থেকে  রিকশা  বা  টোটোতে  মন্দিরে  পৌঁছে  যান।  নদিয়া  জেলার  শান্তিপুর  থেকেও  গঙ্গা  পেরিয়ে  কালনায়  যেতে  পারেন।
             
মন্দিরটি  পরিদর্শনের  তারিখ :  ০২.০৭.২০১৬

 
     
 সহায়ক  গ্রন্থাবলি  :
            ১) কালনা  মহকুমার  প্রত্নতত্ত্ব   ও  ধর্মীয়  সংস্কৃতির  ইতিবৃত্ত    বিবেকানন্দ  দাস 
            ২)  বাংলার  মন্দির  স্থাপত্য  ও  ভাস্কর্য  :  প্রণব  রায় 

                                                                                              ******