শনিবার, ২০ জুন, ২০১৫

Krishnanagar Rajbari, Krishnanagar, Nadia

    

            কৃষ্ণনগর  রাজবাড়ি,  কৃষ্ণনগর,  নদিয়া 

                              শ্যামল  কুমার  ঘোষ 


            নদিয়া  জেলার  সদর  শহর  কৃষ্ণনগর।  নদিয়ারাজের  প্রতিষ্ঠাতা  ভবানন্দ  মজুমদারের  পৌত্র  রাজা  রাঘব  রায়  তাঁর  জমিদারির  প্রায়  মাঝখানে,  জলঙ্গী-নদীতীরের  রেউই  গ্রামে,  চারি  দিকে  পরিখা  খনন  করে  রাজধানী  স্থাপন  করেন।  রাজা  রাঘবের  পুত্র  রাজা  রুদ্র  রায়  রেউই- এর  নাম  পরিবর্তণ  করে  ভগবান  শ্রীকৃষ্ণের  নামে  নাম  রাখেন  কৃষ্ণনগর।  কথিত  আছে,  সেই সময়  রেউই-এ  অনেক  গোপের  বসতি  ছিল  এবং  তাঁরা  মহাসমারোহে  শ্রীকৃষ্ণের  পুজো  করতেন।  সে  কারণে  তিনি  এই  নামকরণ  করেন।  রাজা  রুদ্র  দিল্লীর  বাদশাহ  জাহাঙ্গীরের  কাছ  থেকে  পূর্তকাজে  নিপুন  এক  স্থপতিকে  এনে  কৃষ্ণনগরে  তাঁর  সহায়তায়  কাছারি,  চক,  মুসলিম  স্থাপাত্যানুগ  চারমিনার  সদৃশ  তোরণ  প্রভৃতি  নির্মাণ  করেন।  বিষ্ণুমহল  ও  পঙ্খ-অলংকৃত  পূজামণ্ডপ  নির্মাণ  করেন  মহারাজা  কৃষ্ণচন্দ্র।  অবশ্য  পরবর্তী  বিভিন্ন  নদিয়ারাজের  সময়ে  এ  সবের  সংস্কার  ও  নবীকরণ  হয়েছে। 
 
            রাজবাড়ির  বিরাট  পূজামণ্ডপ  সত্যই  এক  দর্শনীয়  পুরাসম্পদ। পূজামণ্ডপের  'পঙ্খে'র  বিচিত্র  কারুকার্য  অতুলনীয়। পূজামণ্ডপের  থাম,  খিলান  ইত্যাদিতেও  রাজকীয়  ছাপ  লক্ষ্য  করা  যায়।  মূল  পূজার  স্থানটি  বেশ  বড়।  তাকে  ঘিরে  সামনে-পিছনে-পাশে  কয়েকটি  অলিন্দ  আছে।  বিভিন্ন  পূজাপার্বণ  উপলক্ষে  যাত্রা,  গান,  কথকতা  প্রভৃতির  আসর  মূল  পূজা-স্থানটির  সামনের  অঙ্গনে  বসত।  এই  ধরনের  বিরাট  মণ্ডপ  পশ্চিমবঙ্গে  আর  দেখা  যায়  না।  বর্তমানে  এত  সুন্দর  এই  পূজামণ্ডপটির  অবস্থা  খুবই  করুণ। চারমিনার  সদৃশ  মুসলিম  স্থাপত্য  শৈলিতে  তৈরী  তোরণপথও  অবক্ষয়ের  পথে।

            দোল  পূর্ণিমার পর  দ্বিতীয়  একাদশী  (চৈত্র  মাসের  শুক্লা  একাদশী )  তিথিতে  কৃষ্ণনগর  রাজবাড়ি  প্রাঙ্গণে  এক  বিরাট  মেলা  বসে।  মেলাটি  'বারোদোলে'র  মেলা'  নামে  পরিচিতনদিয়ারাজের  কুল  বিগ্রহ  হলেন  বড়  নারাযণ। বারোদোলে  বড়  নারায়ণ  বিগ্রহের  সঙ্গে  তৎকালীন  নদিয়ারাজ  প্রতিষ্ঠিত  বিভিন্ন  স্থানের  আরও  ১২  টি  কৃষ্ণের  বিগ্রহ  এনে  রাজবাড়ির  দুর্গা  দালানের  পাশে  মণ্ডপ  করে  পৃথক  পৃথক  কাঠের  সিংহাসনে  সাজিয়ে  রাখা  হয়  এবং  তিন  দিনের  জন্য  সাধারণকে  দর্শণ  করতে  দেওয়া  হয়।  এই  তিন  দিন  সাধারণের জন্য  রাজবাড়ির  একটা  অংশ  খুলে  দেওয়া  হয়।  ( আমার  ব্লগ-এ  'বারোদোল  মেলা' দ্রষ্টব্য )   এ  ছাড়া  দুর্গাপূজা,  জগদ্ধাত্রী  পূজা,  ঝুলন  ইত্যাদি  উৎসবও   রাজবাড়িতে  হয়ে  থাকে। 

            কৃষ্ণনগর  রাজবাড়ি  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  স্টেশন  থেকে  সকালের  লালগোলা  প্যাসেঞ্জার  বা  কৃষ্ণনগর  লোকালে  উঠুন।  নামুন  কৃষ্ণনগর  স্টেশনে।  স্টেশন  থেকে  রিকশায়  পৌঁছে  যান  রাজবাড়ি।  ৩৪ নং জাতীয় সড়ক  ধরেও  যেতে  পারেন।  তবে  রাজবাড়ির  পূজামন্ডপ  দেখতে  হলে  বারোদোল  বা  অন্য  কোন  উৎসবে  যেতে  হবে।


চারমিনার  সদৃশ  তোরণপথ
তোরণপথের  শিখরদেশ 

রাজবাড়ির  প্রধান  ফটক - ১

রাজবাড়ির  প্রধান  ফটক - ২

রাজবাড়ির  প্রধান  ফটক - ৩

রাজবাড়ির  একাংশ

রাজবাড়ির  পূজামণ্ডপ  ( বাঁ  দিক  থেকে  তোলা )

পূজামণ্ডপের  পূজার  স্থান

পাশের  অলিন্দ

পূজামণ্ডপের  ডান  দিকের  অলিন্দ
দেওয়ালে  পঙ্খের  অপূর্ব  কাজ - ১

দেওয়ালে  পঙ্খের  অপূর্ব  কাজ - ২

দেওয়ালে  পঙ্খের  অপূর্ব  কাজ -

রাজবাড়ির  দুর্গাপুজো
রাজবাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো- ১

রাজবাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো- ২

   সহায়ক গ্রন্থাবলি   :
             ১. নদীয়া  কাহিনী : কুমুদনাথ  মল্লিক
             ২. নদিয়া  জেলার  পুরাকীর্তি : মোহিত  রায়  ( তথ্য-সংকলন  ও  গ্রন্থনা )
 

           -------------------------------------------

            আমার  ইমেল :  shyamalfpb@gmail.com   প্রয়োজনে  যোগাযোগ  করতে  পারেন।

           --------------------------------------------